হিন্দুদের অশ্বিনী কুমার ব্রতের কথা
" আশ্বিনে রাঁধে,
কার্তিকে খায়।
যে বর মাগে,
সেই বর পায়। " -
ব্রতের চাল ও পান্তা~
আমরা জানি, স্বর্গের চিকিৎসক অশ্বিনী কুমারদ্বয় সূর্যদেব ও সংজ্ঞা’র পুত্র। অভিশাপগ্রস্ত সংজ্ঞা জগজ্জননী পার্বতীর কাছে নিজের দুর্দশা থেকে মুক্তি চাইলে মা পার্বতী এক মুষ্টি চাল তাকে প্রসাদী দেন। বলেছিলেন, আশ্বিন মাসের সংক্রান্তির রাতে রান্না করে রেখে মহাদেবের অর্চনা করবে। কার্তিক মাসের পয়লায় আদিদেবের চরণে উৎসর্গীকৃত সেই ভিজা অন্ন প্রসাদ নেবে অর্থাৎ পান্না করবে। সকল মনস্কামনা পূর্ণ হবে।
সে নিয়ম মেনে রোগ ও অভিশাপমুক্ত হয়েছিলেন দেবী সংজ্ঞা। এবং এই লোকাচারের নাম হয় "ব্রতের চাল"। চট্টগ্রাম, তদসংশ্লিষ্ট অঞ্চল ও তথা হতে আগত বাঙালির মধ্যে মহাসাড়ম্বরে এই লোকাচার পালিত হয়।
কে এই অশ্বিনী ভ্রাতারা ?
সে এক সময়, তখন সূর্য দেবের তেজ ছিল প্রচন্ড। সংজ্ঞা দেবী ঘর করতে এসেছেন নতুন বউ হয়ে। এমন স্বামী পেয়ে তাঁর আনন্দের শেষ নেই। কিন্তু কাল যায় ভ্রম কাটে। ক্রমশ বুঝতে পারেন, এ দারুণ তেজোদীপ্ত চেহারা আকর্ষণ করে ঠিকই কিন্তু এই দারুণ তেজ, এই খর তাপ নিত্যদিন সহ্য করা দায়। শরীর যে জ্বলে যায়। এদিকে ঘরে দুই সন্তান যম ও যমুনা। সন্তানদের ছেড়েই বা যান কীভাবে? উপায় করলেন তাঁর ছোটবোন।
পর্বত কন্দরের শীতল অন্ধকার নিভৃতে নির্বাসন নিলেন, সংসারের দায়িত্ব দিয়ে গেলেন নিজের প্রাণাধিক প্রিয় যমজ বোনটিকে। এ বোন যেন অবিকল দেবী সংজ্ঞা, তাঁরই ছায়া। একই অঙ্গ শুধু আত্মটুকু আলাদা।
সূর্যদেব বুঝতে পারলেন। দিব্যি চলল সব। ছায়া দেবীর গর্ভে আরও দুটি সন্তান এলেন। এরপর শুরু হল সংসারী দ্বন্দ্ব। পক্ষ বিবাদের সুতো ধরে সূর্যদেব আবিস্কার করে ফেললেন সত্যটা।
দেবতা চললেন আদি দেবী সংজ্ঞার খোঁজে৷ দেবতা এলেন ঘোড়ার ছদ্মবেশে। সংকোচ, দ্বিধা, ক্রোধ, তেজ অনেক কিছুই জমে আছে যে। যদিও সূর্যদেবের তাপের খরতাকে ততদিনে নিয়ন্ত্রণে আনার প্রক্রিয়া আবিস্কার করে ফেলেছেন শ্বশুর মশাই সর্বকর্মা। তবুও সাবধানতা নিলেন। এলেন ঘোটকের ছদ্মবেশে।
সাক্ষাৎ হল। দীর্ঘদিনের জমাট বরফ গলে গেল। এলেন আরও দুই সন্তান ~ অশ্বিনী কুমার। মনুষ্যদেহ অথচ হয়গ্রীবা দুই ঈশ্বর সন্তান।
এই ভাতৃদ্বয়ও যমজ। অদ্ভুত এঁদের শক্তি।
ঋগ্বেদ বলছেন, এরা "তমোঘ্ন" বা "তমোহন" বলেও সংজ্ঞায়িত করছে ( ঋক-৩.৩৯.৮, ৪.৪৫) অর্থাৎ অন্ধকার বিনাশী। কারণ উষা অর্থাৎ ভোরকে পথ দেখিয়ে আনেন এরা। উষার আগে রথ আসে অশ্বিনী ভ্রাতার।
তেমনি, আঁধার অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির জীবনও ফিরিয়ে আনতে পারেন আপন চিকিৎসা দ্বারা। আপনার জেষ্ঠ ভ্রাতা যমের হস্ত হতে মানুষকে ছিনিয়ে আনতে পারেন এমনই এঁদের ক্ষমতা। বিধি চলেন এঁদের নিয়মে।
Comments
Post a Comment